জাতির কণ্ঠ ডেস্ক:
চেয়ারম্যানের বউ প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা । স্কুলে গিয়ে তার কাছে কাগজপত্র দিয়ে আসি । স্বাক্ষর নিয়ে রাখে, পরের দিন গিয়ে নিয়ে আসি । অনেক সময় আপা স্কুলে যাবার পথে কাগজগুলো দিয়ে যায় । আবার মাঝে মধ্যে চেয়ারম্যান ফোন করে সুগারমিল বাজার, খরমা বাজার, তেঁতুলতলা মোড়সহ বিভিন্ন গোপন জায়গায় যেতে বলে । ঐসব জায়গায় গিয়েও স্বাক্ষর নিয়ে আসি । পরিষদে ১০ জন স্টাফ । একেকদিন একেকজন স্টাফ কাগজপত্র আনা-নেওয়া করে । কথাগুলো বললেন গ্রামপুলিশ দফাদার জাকিরুল ইসলাম । দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খান আত্মগোপনে থেকে দফাদারের কথামতো নিয়মিত অফিস করছেন ।
সেলিম খান দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক । ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর মামলা হামলার ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান । এক বছরের অধিক সময় ধরে পলাতক । আত্মগোপনে থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম অদৃশ্য উপস্থিতিতে পরিচালনা করে আসছেন । উত্তোলন করছেন সম্মানীভাতা ।
চলতি বছরের ২৬ আগস্ট চেয়ারম্যান সেলিম খান তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করেন । সেখানে দেখা যায় একটি গোপন কক্ষে বসে ভিডব্লিউভি (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) কার্ডে স্বাক্ষর করছেন । ২৮ আগস্ট আরেকটি পোস্ট করেন সম্মানীভাতা প্রাপ্তির পত্র। পোস্ট দুটো উপজেলাবাসীর মাঝে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় । সমালোচনার প্রশ্নগুলো ছিল; একজন চেয়ারম্যান বছরজুড়ে পলাতক থেকেও কীভাবে স্বাক্ষর কার্যক্রম করছে ? নিয়মিত বেতন তুলছে ? কোথা থেকে স্বাক্ষর করছে ? ইউনিয়ন পরিষদের কাগজপত্র কীভাবে অন্যত্র চলে যাচ্ছে ? কে সহযোগিতা করছে ? জনগণের ভোগান্তি দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (প্রশাসন) কেন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না ?
জনতার প্রশ্নগুলোর সমাধান পেতেই ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিন হাজির হলে দেখা যায়, চেয়ারম্যানের কক্ষটি ফাঁকা। পাশের রুমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) ফাতেমা খাতুন অফিস করছেন । সাথে একজন পুরুষ ও মহিলা মেম্বার । বেশ কয়েকজন সেবাগ্রহীতা । চেয়ারম্যান অফিসে আছেন কী ? জানতে চাইলে সচিবসহ উপস্থিত সবাই নিশ্চুপ । এসময় একাধিক ট্রেড লাইসেন্স বইতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর দেখে ফের জানতে চাওয়া হয় চেয়ারম্যান তো অফিসে নেই, তাহলে স্বাক্ষর করলো কে ? সচিব হিমশিম খেয়ে প্রশ্নোত্তরে বলেন, ‘ চেয়ারম্যান আসেন না । এটা সবাই জানে । তার স্বাক্ষর গ্রামপুলিশের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয় । চেয়ারম্যানের সম্মানীভাতা প্রাপ্তির বিষয়ে বলেন, রেজিস্টার মেইনটেইন না করেই সবকিছু হচ্ছে । চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার কথা । কিন্তু সেই দায়িত্ব প্যানেলের কাউকে না দিয়ে আত্মগোপনে থেকেই চেয়ারম্যান গিরি করছেন চেয়ারম্যান। আত্মগোপনের বিষয়ে আরো বলেন, চেয়ারম্যান ছাড়াও দুজন মেম্বার মো. নয়া মিয়া ও আশরাফুল আলম পলাতক আছেন ’ ।
ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা একাধিক সেবাগ্রহীতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস আমাদের নেই । সয়ে-বয়েই সেবা নিচ্ছি । চেয়ারম্যানকে জবাবদিহি করার লোক আছে , তারা বিষয়টি আমলে নিলেই সাধারণ মানুষের হয়রানি কমে যাবে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন,‘ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে আছেন অথবা অফিস করছেন না এ ব্যাপারে কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি । অভিযোগ বা প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।
জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ’।
উল্লেখ্য ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানায় একাধিক মামলা রয়েছে । আত্মগোপনে থেকেই তিনি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে একটি পারিবারিক মামলায় বিশ দিনের বেশি সময় জেল খেটেছেন ।